Monday, March 27, 2017

হিরো চলে গেলো...

বিশ্বাস করতে পারছিনা ; একি সংবাদ শুনলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে বন্ধ থাকা ফোন ষ্টার্ট করে ফেইসবুকে চোখ রাখতেই সংবাদটি দেখেই আঁতকে উঠলাম। কুলাউড়া উত্তরবাজারের মামু সুয়েবুর রহমান লিখেছেন আয়ারল্যান্ডে থাকা আমাদের এক প্রিয় বন্ধু আম্মন মারা গেছে। (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নালিল্লাহির রাজেউন)। না বিশ্বাস হচ্ছে না। আম্মনের ভাই আমজাদ কিংবা রাজুর ফোন নাম্বার আমার কাছে নেই। ফোন লাগালাম স্কটল্যান্ডের মাহফুজ,লন্ডনের নজরুল খানের কাছে। তারা কিছুই জানে না। নজরুলের কাছ থেকে আম্মনের ভাই রাজুর নাম্বার সংগ্রহ করে ফোন করলাম। নাহ রাজু ফোন ধরছে না। আয়ারল্যান্ডে থাকা উছলাপাড়ার মাছুম খানের কাছে ফোন করার পর সেও বললো সে বিষয়টি জানে না। সোয়ানসীতে থাকা খয়রুলকে ফোন করলাম,সেও ফোন ধরলো না। ফোন করলাম লন্ডনে রোমান এবং এবাদের কাছে। তারও ফোন ধরলো না। আমার কেনো জানি মনে হচ্ছিলো বিষয়টি সত্য নয়। আম্মনের মতো সদা হাস্বোজ্বল হ্যান্ডসাম একটা ছেলে এতো আগে মরতে পারে না। শেষ পর্যন্ত লন্ডন থেকে বন্ধু সুয়েব খান জানালো হ্যা সত্যিই আম্মন মারা গেছে। সুয়েবের কাছ থেকে আম্মনের বড়ভাই আমজাদের ফোন নাম্বার এনে তাঁর সাথে কথা বলে জানলাম শনিবার রাতে কাজ থেকে বাসায় এসে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আম্মন ড্রয়িং রুমে টিভি দেখছিলো। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী তার কাছে মেয়েকে রেখে বাথরুমে গিয়ে ফিরে এসে দেখে আম্মন সোফার পাশে নীচে পড়ে আছে। কথা বলতে পারছেনা ; ইশারায় কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। তৎক্ষনাত এম্বুলেন্স ডাকা হলে তারা এসে আম্মনকে মৃত ঘোষনা করে।
এই সত্যটুকু শুনে কেনো জানি বিছানাতেই শরীরটা মুচরে উঠলো। মৃত্যু কি এতোই কাছাকাছি ; এতো আগেই আমাদের বন্ধু কাউকে চলে যেতে হবে। মনে পড়লো আম্মনের কথা। কুলাউড়া নবীন চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ে কিংবা কুলাউড়া ডিগ্রি কলেজে আমরা যখন পড়তাম সহপাঠিদের মধ্যে সে সবচেয়ে হ্যান্ডসাম এবং ভদ্র-ন¤্র ছিলো। সবসময় হাসি লেগেই থাকতো তার মুখে। কারো সাথে কখনো কোনো বিষয় নিয়ে কোনো বিবাদে জড়াতে দেখিনি তাকে। ¯্রষ্টা প্রদত্ত সৌন্দর্য থাকলেও আম্মন সেই কলেজ লাইফ থেকেই খুব ফ্যাশন সচেতন ছিলো। নায়কদের মতো চেহারার আম্মন সব সময় স্মার্ট কাপড় পড়তো। ব্যাডমিন্টন খেলার বাইরে আমাদের মতো আড্ডা মারা,খেলা-ধুলা,দৌড়-ঝাপে সে কখনো ছিলো না। আমরা দুষ্টামি করে বলতাম আম্মনের স্ক্রীণ নষ্ট হয়ে যাবার ভয়ে সে বাইরে কম বেরুয়। সামান্য রোদেও স্ক্রীণ নষ্ট হবার ভয়ে সে তার হাতে সব সময় ছাতা রাখতো। আমরা অনেকেই তাকে ফেয়ার এন্ড লাভলী বলে ডাকতাম। বছর বিশেক আগে তার ক্যান্সার ধরা পড়ে। কিন্তুু প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার ধরা পড়ায় উন্নত চিকিৎসায় আম্মন ভালো হয়ে যায়। আয়ারল্যান্ডে যাবার পর সর্বশেষ বছর খানেক আগে তার সাথে ফোনে কথা হয়েছিলো। তখনো সেই হাসি ভরা মুখেই আম্মন তার বিয়ে এবং স্ত্রীর সম্পর্কে বলেছিলো। আমন্ত্রন জানিয়েছিলো সুযোগ হলে যেনো আয়ারল্যান্ড ঘুরে আসি। আম্মনের এই মাস ছয়েক পুর্বে এক মেয়ে হয়েছে। মেয়ের ছবি দিয়ে ফেইসবুকে আনন্দ আপ্লুত কমেন্টস দিয়েছিলো।
মৃত্যুর স্বাদ আমাদের সবাইকেই নিতে হবে। কিন্তু তাই বলে এতো আগে.......!!! এতো আগে আমাদের বন্ধু-বান্ধবদের সিরিয়াল চলে আসলো। এখনো তো অনেক কিছুই তার বাকী ছিলো। ছয় মাসের শিশু সন্তানটি হয়তো এখন বুঝতে পারছে না ; কিন্তু তার স্ত্রী যে কিনা মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগেও একসাথে বসে খাবার খেয়েছে খুনসটি করেছে;সে নিজেকে কিভাবে সামলাবে। আম্মনের দেশে থাকা মা-ই বা কিভাবে সহ্য করবেন এই অসাধ্য কষ্ট। আমি জানি না আল্লাহ তাওয়ালা কোন ক্যাটাগরিতে কাকে কখন তুলে নেবার হুকুম পাঠান। তবে আম্মনকে তুলে নেবার হুকুমটা আমার কাছে প্রশ্নবোধক লাগছে। তাকে এতো আগে নিতে হলে কেনোই বা বিশ বছর আগে ক্যান্সার দিয়েও নিলেন না। আবার এখন স্ত্রী-সন্তান দিয়ে পৃথিবীর প্রতি মায়া বাড়িয়ে আম্মনকে নিয়ে গেলেন। বিষয়টি তিনিই ভালো জানেন।
আমাদের হিরো আম্মন চলে গেলো না ফেরার দেশে। আর কখনো পৃথিবী নামক গ্রহে সে আসবে না। এই যাত্রায় হয়তো আমাদেরও সিরিয়াল চলে আসছে; কে জানে,কে আগে যাবে আর কে পরে। আমরা যারা চল্লিশ ছুঁেয় গেছি তাদেরকে ভাবতে হবে জীবনের দুই তৃতীয়াংশ সময় আমাদের শেষ। তবে এই শেষ যাত্রার যাত্রী হবার পুর্বে আমরা সবাই যেনো পরপারে আল্লাহ‘র সম্মুখে দাঁড়াবার খোরাক সংগ্রহ করে যেতে পারি। এই সময়টুকু যেনো আমরা পাই।
আম্মন তুমি চলে গেছো। সবসময় যেভাবে হাস্সোজ্জ্বল থাকতো তুমার মুখ,পরপারেও সেই হাসি মুখ রেখেই আল্লাহ যেনো তোমাকে জান্নাতবাসী করেন। আম্মনের স্ত্রী ও মা‘সহ পরিবারের সকলকে এই শোক সইবার ক্ষমতা যেনো আল্লাহ দেন। এটাই প্রার্থনা করছি। ভালো থেকো বন্ধু ভালো থেকো.......
রিয়াদ আহাদ
বার্মিংহাম

No comments:

Post a Comment